জ্যোতিষ শনি গ্রহ: শনি গ্রহমহাদশা কী রকম প্রভাব বিস্তার করে?
- anirudhbhattachary5
- Feb 1
- 1 min read
Updated: Feb 2
জ্যোতিষ শাস্ত্রে শনি গ্রহ

শনি মহাদশা শুনলেই অনেকে চিন্তায় পড়েন। এবার যেন সব শেষ। ভাবটা এমন যেন এখন ব্যক্তিটির জীবনে শুধু ঝড় ঝাপটা, অশান্তি ইত্যাদির পরিবেশ থাকবে। যেন কেউ তার সবকিছু নিয়ে নেবে। তিনি মানুষটিকে কষ্ট দিয়ে শেষ করে দেবেন। কিন্তু সত্যি কি তাই হবে,- আমাদের সৌরমন্ডলে, পৃথিবীর পরিপ্রক্ষিতে এটি সবথেকে বাইরের outer গ্রহ।শনি কথার অর্থ যা কিছু খুব আস্তে। शनैः শনৈঃ কথাটার মানেই খুব আস্তে আস্তে।
কিংবদন্তির গল্প: শনির পিতা হলেন সূর্য,সূর্যের স্ত্রী সঞ্জনা,তার তেজ সহ্য না করতে পেরে নিজের পিতার কাছে ফিরে যেতে সময় নিজের একটি প্রতিরুপ তৈরী করেন। ছায়া। সূর্য না বুঝে তার সাথে সমাগম করেন ও তা থেকে শনির উৎপত্তি হয়। যখন সূর্য তা বুঝতে পারেন তিনি ছায়ার উপর রাগ করেন, তিনি শনিকে পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেন না। পরে তিনি তাকে স্বীকার করে নেন। কিন্তু ততক্ষনে শনি তাতে কষ্ট পেয়ে তপস্যা করে মহাদেবকে প্রসন্ন করেন। তিনি বর চান যে তাকে যেন সূর্য থেকেও বেশী শক্তিশালী করা হোক। মহাদেব তা মানতে পারেন না, কিন্তু তিনি তাকে বর দেন যে তিনি এই মহাবিশ্বে দন্ডাধিকারী হবেন।মানুষ যখন কর্ম করবে তার পরিণতি কি হবে তা তিনি সুনিশ্চিত করবেন।সূর্য যদি বিধি, তাহলে তিনি বিধান হবেন। বিধি যদি আদর্শ বোধ, তাহলে বিধান হবে তার উপলব্ধি। তাহলে আমরা পৃথিবীতে থাকা মানুষরা পড়লাম দুটি শক্তির মধ্যে। একদিকে সূর্য, অন্যদিকে শনি।
এই উল্লিখিত গল্পটি বিশ্বাস করবেন কি না, তা আপনার নিজস্ব ইচ্ছা ও স্বাধীনতা। কিন্তু আমরা এই থেকে, আমাদের জ্যোতিষের উপাদানগুলো দেখে নিতে পারি। সূর্য যদি আছেন ভোরবেলায়, তার আলো আমাদের কি ভালোই না লাগে। সকাল দশটা পর্য্যন্ত বেশ ভালো লাগে। তাহলে তখন তার স্ত্রী সঞ্জনা তার সাথে আছেন। সঞ্জনা কথার অর্থ, যা কিছু সামঞ্জস্য বজায় রাখার সাদৃশ্য। ‘in harmony’। যা কিছু একটি আনুকুল্যের সম, সাদৃশ্য। তাহলে ভোর বা সকালের সূর্যের আলো আমাদের তাই দেয়। কিন্তু সূর্য মধ্য আকাশ পেরিয়ে গেলে, দক্ষিন পশ্চিমী দিকে থাকতে সময় সব থেকে বেশী তেজ দেখান। দুপুর ২:৩০ র পর থাকা যায় না। তখন তা আমাদের ভালো লাগে না। তখন সঞ্জনা তার তেজ সহ্য করতে পারেন না। ‘not in harmony’। তাই তিনি চলে যাবেন বাপের বাড়ী। তখন তিনি যাওয়ার আগে সূর্যকে সঙ্গিনী দিয়ে গেলেন, ছায়া। এবার সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে মিলিত হয়ে যাচ্ছেন তখন সন্ধ্যা হলো। এবং একটু পরেই তাদের এই সমাগম থেকে রাত্রি তৈরী হলো। শনি।
সেই যুগে যখন আলো ছিলো না। তখন অন্ধকারে সব কাজ করা কত কষ্টকর ছিলো, অসুবিধা হতো। রাতের বেলায় বিভিন্ন রকমের ভুল ভ্রান্তি হয়ে যেত। তা হলো রাহু। তাই শনি ও রাহু পরম মিত্র। অন্যদিকে পৃথিবীর যেই ভাগ অন্ধকারে চলে গেল তার বিপরীত দিকে আবার সূর্য্যের আলো আছে। তাই শনি সূর্যের সমান শক্তিশালী। সূর্য একা পুরো পৃথিবীকে আলোকিত করতে পারেন না।তিনি শুধু কিছুটা ভাগই করতে পারেন। বাকিটা শনির অধীকারে চলে গেল। কিন্তু.. যেমনটা সবসময় হয়ে থাকে, আমাদের ঈশ্বর সবসময় একটি caveat রেখে চলেন। তিনি চন্দ্র দিয়ে দিলেন, রাতে আলোর জন্য। যার নিজস্ব আলো নেই কিন্তু সূর্য্যের আলো বিচ্ছুরিত করে আমাদের আলো দিয়ে দেন। তাই চন্দ্রকে শনি পছন্দ করেন না। তাহলে আমাদের জ্যোতিষের মুলে একটি ছকে যদি চন্দ্র ও সূর্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এরা আলো দিতে পারে, তাহলে তাদের দুজনকেই পছন্দ করে না এমন উপাদান আমাদের কাছে হলেন শনি, অন্ধকার। কিংবদন্তির গল্প শুনতে আজব হলেও খুব উর্বর মস্তিষ্কের কাজ।
শনির শত্রু গ্রহ সূর্য ও চন্দ্র। তার আরেক শত্রু মঙ্গল দেবতাদের সেনাপতি। দেবতা মানে শুভ গুন। যখন শুভ গুন চালিত হয়, তখন অশুভের সাথে যুদ্ধ হয়।’যুদ্ধ’ তাই তিনি ক্রুড় কিন্তু পরিণতি শুভ তাই মঙ্গল। এই পার্থিব জীবনে শরীরের যে অস্তিত্ব তা হলো মঙ্গলের প্রতিক। আপনি যা করবেন মঙ্গলের সাহায্যে করবেন।আপনার যে কোনো পরিস্থিতি যা আপনাকে চাপে ফেলে চুপসে রাখার চেষ্টা করবে। আর আপনি তার বিরোধ করবেন, মুখামুখি হয়ে দাঁড়াবেন। তা হলো মঙ্গলের প্রতিক। তার অর্থ যদি শনি আপনাকে কোনো পরিস্থিতিতে সীমিত করে, বাধ্য করে, তাহলে তাকে শেষ করার জন্য আপনি যা করেন, তা হলো মঙ্গল। রাতের বেলায় আগুন জালিয়ে আপনি অন্ধকার কম করে নিলেন, অন্তত নিজের আশে পাশে। তাই শনি ও মঙ্গলের শত্রুতা। আর শনিকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারে মঙ্গল। আপনি এমন কোনো জোগাড় যন্ত্র করে নিলেন যা দিয়ে আপনার কাজ সহজ হয়ে গেল। মানে আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং করলেন। আপনার যন্ত্রটিকে নিশ্চয়ই কিছুর বিরুদ্ধে কাজ করতে হচ্ছে। যেই বিপরীত শক্তিকে আপনি নিজের শরীর দিয়ে করতে পারছিলেন না।তাহলে এই বিপরীত শক্তি হলো শনি। ও তার বিপরীতে আপনি যে সংঘর্ষ করছেন তা হলো মঙ্গল। তাই তারা শত্রু। বিপরীত উর্জা। আপনি যা কষ্ট পাবেন তা এই পার্থিব জীবনে পাবেন। যা কর্ম করবেন তা এখানে করবেন। তার যা পরিণতি দেখবেন তাও এখানেই দেখবেন। যা বাকি থাকবে, তাকে উপলব্ধি করতে আবার এখানেই আসতে হবে।তা সব মঙ্গলের ‘domain’ বা অন্তর্গত। তাই তিনি ‘ভুমির’ পুত্র ‘ভৌম’। যেদিন আপনার মঙ্গলের জোর একদম থাকবে না, সেদিন আপনার প্রাণ ক্ষীন হয়ে যাবে, শেষ হয়ে যাবে। সেদিন শনি চলে যাবেন। মতান্তরে মানা হয় যেদিন আপনার প্রারব্ধ শেষ বা কর্ম শেষ তার এক ক্ষন পরে আর শনি আপনাকে একটি শ্বাসও দেবেন না। তখন আপনাকে আগুনের কাছে দিয়ে দিলাম,বা মাটিতে কবর দিয়ে দিলাম। দুটিই মঙ্গল।
এত দীর্ঘ গৌরচন্দ্রিকা, সত্যি অসহ্য। কিন্তু উপায় নেই। এই যে ধৈর্য্য ধরতে ভালো লাগছে না। এটাই শনির উপলব্ধি। আপনি যা অতি সহজে পেতে চাইছিলেন, তা পাওয়ার আগে আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে হলো, আর আপনার মুল জানবার বিষয়টা পাচ্ছেন না, এই বাস্তব উপলব্ধিটাই শনি। আপনি যা-ই করতে যান, তাতে যে বিরোধী শক্তি, তা-ই শনি।
আপনার শরীরে, বা জীবনে যা কিছু খুব আস্তে আস্তে হয়, তা শনির প্রতিক। দাঁত, হাঁড় যা আস্তে আস্তে গজায় কিন্তু শক্ত, হাঁটু, গোড়ালি মানেএমন অঙ্গ যা পুরো কাঠামোর ভার বহন করে, নিঃশ্বাস বৃহস্পতির কারকত্ব কিন্তু তার চালনা হওয়া শনির কারকত্ব যা আস্তে আস্তে বা নিয়মিত হয়ে চলে। যা কিছু খুব ঠান্ডা, কঠোর, তাও শনির প্রতিক। লোহা, সিমেন্ট, কোনো কাঠামো ইত্যাদি। যা কিছুতে পরিশ্রম লাগে, তাও শনির প্রতিক। তাই শনি ছাড়া আপনার উপায় নেই।
আপনার কর্ম ভাব মানে ১০ম রাশির স্বামী শনি। আবার কর্ম ভাবের কারকও শনি। আপনার পেশাগত যা কিছু আপনি করেন, তা আপনাকে রোজ করতে হয়, বার বার করতে হয়, নির্ভুল ভাবে করতে হয়। আপনাকে অনুশাসন মেনে চলতে হয়। যদি এসব আপনি করেন তাহলে আপনার সুনাম হয়। তাই পরোক্ষ ভাবে শনি আপনাকে তা পেয়ে নিতে সাহায্য করেন। তাতে আপনার উপার্জন বৃদ্ধি পায়। তা আপনার লাভ। তাই ১১ ভাব হলো কুম্ভ।তারও স্বামী শনি। তার মানে শনি যদি সঠিক অবস্থানে না হন, তাহলে এই বিষয়ে অসুবিধা দেখা দেবে। যদিও শনির এই কুম্ভ রাশিতে অন্য কোনো গ্রহের অবস্থান না হওয়া খুবই ভালো।যদি অনান্য যে কোনো বর্গ চার্টেও এই রাশিতে কোনো গ্রহের অবস্থান না হয়, তাহলে খুব ভালো। এই রাশিতে যা থাকবে, প্রাপ্তি হবে, তা একদিন জাতকের কাছে থাকবে না।
যখন আপনি কোনো কাজ প্রথমবার করেন, তাতে ভুল হতে পারে, হয়। তারপর আপনি আবার করেন, বার বার করেন। তারপর অভ্যস্ত হয়ে যান। এটা হলো এক ধরণের জ্ঞান। তাই তিনি বৃহস্পতির সম। বৃহস্পতি উচ্চের পথ ধরে আসেন। শনি নিম্নের পথ ধরে আসেন। তাই যত শারীরিক খাটাখাটনি, যা এমন কিছু তাই শনি। যদি আপনি রাজাও হয়ে থাকেন, তাহলেও আপনাকে এই অনুভব করানো, যে আপনি সর্বেসর্বা নন, তাও শনির কাজ। আপনি যা করেছেন, তার একটি নৈসর্গিক পরিনতি হতে হবে, তাও শনির কাজ। সেটাই ‘দন্ড’। ‘justice’। মানুষ। তাকে শাস্তি বানিয়ে দিয়েছে। শনি ন্যায় করবেন।
শনির মহাদশা ১৯ বছরের। আপনার কুষ্ঠিতে শনি যেই ঘরে আছেন, আপনার জীবনে সেই বিষয় আপনাকে কর্ম করতে বাধ্য করবে। শনির দশার প্রভাব আপনার কুষ্ঠিতে শনির অবস্থানের উপর নির্ভর করবে। তিনি যদি ভালো অবস্থান পেয়েছেন, তাহলে পরিণতি ভালো হবে, কিন্তু তার একটি শর্ত থাকবেই, যে আপনি আপনার কর্ম করবেন। যখন আমরা বলি শনি ভালো তার অর্থ মানুষটির কিছু গুণ আছে। সে সত্যবাদী, সে ধর্ম বা ন্যায় পরায়ণ, সে কর্মঠ, সে অনুশাসন প্রিয়। ব্যক্তিটি অলস নয়। পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন, গুছিয়ে চলা, সভ্য ভদ্র ভাষার ব্যবহার, কর্মচারীদের প্রতি ন্যায়োচিত ব্যবহার, দানী, নেশা করেন না। যদি এই গুণ গুলি আপনার আছে, তাহলে আপনার শনি ভালো। তার মানে বুঝতেই পারছেন যে জীবনে সেই মুল্যবোধ যাকে ধরে রাখা শক্ত তাকে যেই ব্যক্তি ধরে রাখতে পারছে, তার জন্য অবশ্যই সে নিজের অন্তর থেকে চেষ্টা করছে, বা সে এমন পরিস্থিতি, বা মানুষের সহযোগিতা পাচ্ছে, যে তার ভুল বা পাপ, বা অন্যায় করতে হচ্ছে না।
ধরুন, আপনার পকেটে টাকা আছে। কেউ সাহায্য চাইলো। আপনি তাকে না করার জন্য বললেন, আমার কাছে নেই। এটা শনিকে দুর্বল করা। এটা আপনাকে একদিন উপলব্ধি করতে হবে। ধরুন একজন ভিক্ষুক আপনার কাছে সাহায্য চাইলো। আপনি তাকে কিছু দিলেন না। কিন্তু তাকে খুব তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলেন। দুর দুর করলেন, এটা শনিকে দুর্বল করা। নিজের কর্মচারী, কাজের মানুষকে গালাগাল করা, তার বেতন কেটে নেওয়া ইত্যাদি। তাকে আপনার পছন্দ নয়, তাকে বার করে দিন। তার হিসাব করুন, তাকে দিয়ে আর না আসতে বলুন। কিন্তু তাকে ছোট করা, অপমান করা বা অন্য কিছু শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা না করাই শ্রেয়স্কর। এখানে সে যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, তার কথা হচ্ছে না। তার সুবিচার করাও শনি।
আপনি কথা দিচ্ছেন, কিন্তু কথা রাখছেন না। তা-ও শনিকে দুর্বল করা। অগুছালো থাকেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে থাকেন না, সময় মতন খাওয়া দাওয়া করেন না, ব্যায়াম, পরিশ্রম করেন না, সব শনিকে দুর্বল করা। এখানে দুর্বল করার অর্থ, তার খারাপ প্রভাবকে স্থান দেওয়া, বলবান করা।
আপনার কুষ্ঠিতে শনি যেই ঘরে আছেন, সেই স্থানে ফিরে আসতে তার সময় লাগবে ৩০ বছর। তার মানে শনি একটি রাশি বা ভাবে ২.৫ বছর থাকবেন। তিনি একটি জাতককে সেই ভাব সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষা দেবেন, কর্মের দ্বারা। প্রত্যেকটি ভাবে তিনি বিভিন্ন উপলব্ধি কোনো অসুবিধা, বাধা, বিপরীত শক্তির দ্বারা দেবেন। এতে মানুষটি বাস্তবিকতা বুঝবে। তাই প্রথম ৩০ বছরে শনি বাস্তবিকতার শিক্ষক। এবার পরের ৩০ বছর আবার শনি নিজের এই কাজ করবেন, প্রত্যেক রাশিতে ২.৫ বছর করে থাকবেন। এবার কিন্তু তিনি নিরীক্ষক। তিনি প্রত্যেকটি ‘ভাবে’ আবার আসবেন ও আপনাকে পরীক্ষা করবেন যে আপনাকে আগে যা শিখিয়ে ছিলেন তা আপনি শিখেছেন কি না। তাই আপনি নিজের জীবনে প্রথম ৩০ বছর কি করেছেন ও কেমন সততা,পরিশ্রম দিয়ে করেছেন তা নির্দিষ্ট করবে যে পরের ৩০
বছর আপনি কেমন দেখবেন।কারণ এই সময়ে বা এইবার আপনি একটু কঠোরতা অনুভব করবেন। এরপরের ৩০ বছর সবাই পুরো দেখতে পারেন না, কিন্তু আপনার কর্ম অনুযায়ী আপনি স্বর্গ বা নরক ভোগ করবেন। এই সময়ে শনি আপনার ন্যায় করবে। আপনার শরীরে ছুঁচ ফুটবে, খাওয়া দাওয়া কষ্টকর হবে, দেখতে পারছেন না, শুনতে পারছেন না, নড়তে পারছেন না, সাধারণত,এই সবকিছু নির্ভর করে আপনি আগের বছরগুলিতে কতটা সুনিয়োজিত ছিলেন বা কর্মঠ ছিলেন তার উপর।যদিও তা শেষ কথা নয়। আপনার একান্ত আপন যারা তারা আছেন না নেই, আপনাকে যত্ন করছেন কি না ইত্যাদি। এর বিপরীত-ও হতে পারে, যে আপনি সুস্থ, সবার সহজোগিতা পাচ্ছেন, সব আছে, একদিন হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেলেন। প্রারব্ধ শেষ, চলে গেলেন।
তাহলে শনির মহাদশা আপনাকে বাস্তবিকতার সাথে পরিচয় করাবে। শনি আপনাকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করেন। আপনাকে পরিপক্কতা দেবে, অনুভবের দ্বারা। আপনার মন(চন্দ্র) চাইবে যে সব এখন হোক, আর বাস্তবিকতা তার অনুকূল হবে না। তা বলবে অপেক্ষা করো, ধৈর্য্য ধরো। আরো চেষ্টা করো, আবার করো। তবে এটি একটি সাধারন ফল। কুষ্ঠির অবস্থান হিসাবে একদম আলাদা কিছু হতে পারে। তাই আপনার প্রশ্নের একটি নির্দিষ্ট উত্তর হতে পারে না যা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তাই আমি নিম্নলিখিত কিছু সাধারণ সিদ্ধান্ত উল্লেখ করলাম, যা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কুষ্ঠির নিজের পরিস্থিতি হিসাবে তার ফলাফল হতে পারে।
শনির তিনটি দৃষ্টি আমরা সবাই জানি, তৃতীয়, সপ্তম ও দশম।
তৃতীয় দৃষ্টি:
শনি নিজে যেখানে বসেন, সেই ঘর থেকে তৃতীয় ঘরকে দৃষ্টি দেন। এই দৃষ্টি কষ্টের কারক হবে, যেই ‘ভাবে’ দৃষ্টি পড়েছে তার সংক্রান্ত বিষয়ে জাতক জীবনে কষ্ট অনুভব করবে।
সপ্তম দৃষ্টি:
যেই ‘ভাবে’ শনির সপ্তম দৃষ্টি পড়বে, সেই সংক্রান্তে জাতক জীবনে পাপ করবে। এই বিষয়ে আপনার মুল্যবোধ, আপনার চরিত্রের পরীক্ষা করা হবে। তার অনুরুপ পরিণতি দেখতে হবে।
দশম দৃষ্টি:
যেই ‘ভাব’ দশম দৃষ্টি পাবে, সেখানে আপনার অভাব দেখা দেবে। সেই ভাব সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু একটা না পাওয়ার অনুভুতি থাকবে। এটা আপনার আধ্যাত্মিক উন্নতির কারক হবে।
ভৃগু জ্যোতিষের কিছু সাধারণ সিদ্ধান্ত
উপরিলিখিত এই তিনটি দৃষ্টি সবাই জানেন। কিছু দৃষ্টির কথা এখানে উল্লেখ করছি যা আপনি পরীক্ষা করে বলতে পারেন, বিষয়টি ভৃগু জ্যোতিষের একটি ভাগ।
শনি নিজের অবস্থান থেকে দ্বিতীয় ভাবকে জীবনে একবার খুব কষ্ট দেবেন । ( এই জন্য শনির মন্দিরে গেলেও তার সরাসরি সামনে দাঁড়াতে না করা হয়। এক পাশে দাঁড়াতে হয়।
শনি নিজের অবস্থান থেকে ১২ ঘরে বা সেই ‘ভাবে’ এমন পরিস্থিতি দেন যে কোনো না কোনো বিষয়ে বা কোনো একটি বিষয়ে অসুবিধা চলতেই থাকে। তার কোনো সুরাহা হয় না।
এরকম শনির অবস্থান থেকে প্রত্যেক ঘরেরই একটি দৃষ্টি প্রভাব আছে। কিন্তু সবকটি লিখে তা লিখে এখানে আর জটিলতা বাড়ালাম না। এটি নিজের মধ্যে আরেক বিষয় হয়ে যাবে।
জাতক নিজের বিভিন্ন বয়সে শনির প্রভাব, অনুভব করবে। সবগুলি উল্লেখ করতে প্রচুর সময় লাগবে। আর তার সিদ্ধান্তে গেলাম না,
• ২০ বছর বয়সে শনির তৃতীয় দৃষ্টি,
• ২৪ বছর বয়সে জন্মগত স্থান থেকে চতূর্থে,
• ২৮ বছর বয়সে নিজের জন্মগত স্থান থেকে ৬ম ভাবে,
• ৩২ বছর বয়সে নিজের থেকে ১০ম স্থানে,
• ৪৮ বছর বয়সে নিজের চেয়ে চতূর্থ ভাবে,
• ৫১ বছর বয়সে নিজের জন্মগত স্থান + ২৫% তৃতীয় দৃষ্টি,
• ৬৬ বছর বয়সে নিজের জন্মগত ভাবকে প্রভাবিত করবে।
যদি শনি বক্রি হয়ে থাকেন, তাহলে এমন জাতককে একই কাজ বার বার করতে হয়। সাধারনত এমন জাতক নিজের ভুল থেকে শিখতে চায় না। তারা এমন ভাবে কাজ করে যে তাদের জীবনে সমান রকমের ঘটনা বার বার ঘটতে থাকে। এমন জাতক নিজের অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে না। এমন জাতক যদি নিজের জীবনে প্রত্যহ হওয়া ঘটনা লিপিবদ্ধ করে রাখতে থাকে, তাহলে সে দেখতে পাবে যে প্রত্যেক ১৩-১৪ বছরে তার জীবনে আবার সেইরকম ঘটনা ঘটিত হয়ে চলেছে।
যা কিছু শনির প্রভাব হিসাবে উল্লেখ করলাম, সেই বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করাই তার প্রথম ও প্রধান প্রতিকার।
আশা করি কিছুটা ধারণা তৈরী করতে পারবেন এবং শনি গ্রহ কে নিয়ে ভীতত্রস্ত হবেন না।






অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আপনার এই লেখা পড়ে অনেক কিছু জানলাম।