জ্যোতিষশাস্ত্র: ধনু লগ্নের জাতকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
- anirudhbhattachary5
- Apr 5
- 2 min read

ধনু লগ্ন:
ধনু কালপুরুষের নবম রাশি, যা ধর্ম এবং ভাগ্যের প্রতীক।এটি দেবগুরু বৃহস্পতির দ্বারা শাসিত, যিনি অত্যন্ত সদয়, জ্ঞানী, বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ।এটি একটি অগ্নিতত্ত্ব রাশি এবং পুরুষ রাশি, যাপুরুষত্ব ও দীপ্তির পরিচায়ক।ধনু একটি উভয়চর রাশি, যা ভারসাম্যের প্রতীক এবং এটি অর্ধেকমনুষ্য এবং অর্ধেক চতুষ্পদ রাশি।এর প্রতীক হল একটি অর্ধেক মানুষ এবং অর্ধেক ঘোড়া, যার হাতে একটি টানা ধনুক থাকে, শিকার করার জন্য প্রস্তুত।এই রাশি উচ্চভূমি ও উঁচু ভবন নির্দেশ করে। এটি কেতুর উচ্চ রাশি এবং রাহুর নীচ রাশি। ধনু লগ্নে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তি লম্বা দেহের অধিকারী হন, সুগঠিত শরীর থাকে। তাদের মুখমণ্ডল ডিম্বাকৃতির হয়, কপাল উঁচু এবং নাক সুস্পষ্ট ও বড় হয়।তাদের চোখ স্বচ্ছ, গায়ের রং উজ্জ্বলএবং হৃদয়ে উদারতা ও মর্যাদাপূর্ণ চেহারার অধিকারী হন।
ধনু লগ্নে জন্মানো ব্যক্তি সম্মানীয়, উদারচেতা, সৎ, সহানুভূতিশীল, সত্যবাদী এবং ন্যায়পরায়ণ হন। তারা পরিচ্ছন্ন এবং সাজানো-গোছানো জীবনযাপন করে। তারা স্বাধীনচেতা, সক্রিয় ওপ্রফুল্ল প্রকৃতির হন এবং খেলাধুলা ও শারীরিক ব্যায়ামে পারদর্শী। কখনো কখনো একটু রুক্ষ বা উদ্দীপ্ত হন, আবার কখনো শান্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ থাকেন, তবে সাধারণত ভদ্রতা মেনে চলেন ও ভালো আচরণ করেন। তাদের মনের গঠন বহুমুখী ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সক্ষম এবং তারা স্বভাবগতভাবে ধার্মিক।
এই রাশিতে জন্মানো ব্যক্তির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো:
১. বড় দাঁত,
২. বিশাল কপাল,
৩. নির্ভরশীলদের আশ্রয়দাতা,
৪. অধ্যবসায়ী ,
৫. শারীরিকভাবে সবল,
৬. নাক ও ঠোঁট অপরিচ্ছন্ন,
৭. কুৎসিত নখ,
৮. ন্যায়পরায়ণ,
৯. মোটা উরু ও পেট,
১০. বিজ্ঞান ও শাস্ত্রে দক্ষ,
১১. অগ্রসর বুদ্ধিমত্তা,
১২. রাগী,
১৩. ক্ষমতাশালী ব্যক্তির বিরোধিতা করতেও ভয় পান না ,
১৪. বংশের প্রধান,
১৫. শত্রুদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেন,
১৬. যুদ্ধে খ্যাতিমান,
১৭. ছলনার জাদুকর,
১৮. আত্মীয়দের দোষ খোঁজেন,
১৯. ললিতকলা প্রিয়,
২০. নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত,
২১. আত্মীয়দের মঙ্গল করেন,
২২. উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব,
২৩. শরীর বা চোখের রোগে আক্রান্ত হন ,
২৪. রাজপ্রসাদ থেকে ধন লাভ করেন ,
২৫. ধার্মিক কাজে রত থাকেন।
ধনু লগ্নে জন্মানো ব্যক্তিদের স্পষ্ট লক্ষণ:
এদের দাঁত বড় ও বিশাল কপাল থাকে।এর কারণ এই রাশির প্রতীকে অর্ধমানব ও অর্ধঘোড়ার সংমিশ্রণ, যেখানে ঘোড়ার মত বড় দাঁত এবং অগ্নিতত্ত্বের প্রভাবে কপাল প্রমুখ্য পায়। তাই ধনুলগ্নে জন্মানো ব্যক্তিদের কপাল বড় হয়, যেখানে তাদের ভাগ্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।অগ্নিতত্ত্বের প্রভাবে মাথায় চুল কম বা পাতলা হয়।
ব্যক্তি তার নির্ভরশীলদের আশ্রয় ও সহানুভূতি দেখায়, কারণ পরিবারঘটিত ২য় রাশির অধিপতিলাভের ১১তম ঘরে অবস্থান করায় তা অনুকূল প্রভাব ফেলে।পরিবারের বিচার হয় ২য় ঘর থেকে, এবং এই লগ্নে ২য় ঘরের অধিপতি ১১তম লাভের ঘরে নিজের উচ্চের শক্তি প্রকাশ করে।এছাড়া চন্দ্র পরিবার-সংক্রান্ত কারক, এবং লগ্নেশ বৃহস্পতি চন্দ্রের রাশিতে উচ্চের হন।তবে পরিবারএই ব্যক্তিদের জন্য দুর্বলতার একটি উৎসও হতে পারে, কারণ বৃহস্পতি ২য় ঘরে নীচ (নিচরাশি) অবস্থান লাভ করে।এর মানে, পরিবারের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি জীবনের মূল উদ্দেশ্য, অর্থাৎ ধর্ম ও ন্যায়ের বিস্তার, থেকে বিচ্যুত করতে পারে।
ধনু লগ্নে জন্মানো ব্যক্তি ধৈর্যশীল এবং শারীরিকভাবে সবল।এই ধৈর্য সাধারণত প্রতিকূল অবস্থায় প্রকাশ পায়।ষষ্ঠ ঘর প্রতিকূলতা নির্দেশ করে।এই ব্যক্তিরা প্রতিকূলতাকে সহজেগ্রহণ করেন, কারণ ষষ্ঠ ঘরের অধিপতি শুক্র চতুর্থ ঘরে (সুখের ঘর) শক্তিশালী অবস্থানে থাকে।তারা প্রতিকূলতাকে জয় করার জন্য মুখিয়ে থাকেন এবং সেগুলো তাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারে না।এছাড়া, এই ব্যক্তিদের অজানার (অষ্টম ঘর) কোনো ভয় থাকে না, কারণ লগ্নেশ বৃহস্পতি অষ্টম ঘরে কর্কট রাশিতে উচ্চের হয়।এই ব্যক্তিরা অত্যন্ত ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে অজানার মুখোমুখি হন, বরং এমন অনিশ্চয়তা তাদের রোমাঞ্চিত করে।
এই ব্যক্তি শক্তিশালী হন। "সত্ত্ব" মানে শুধু শক্তি নয়, এটি সত্ত্বগুণকেও বোঝায়, যা জ্ঞান ওপবিত্রতার উৎস। তমোগুণ থেকে দুর্বলতা জন্মায়।এই ধারা থেকে বোঝা যায়, একজন ধনু ব্যক্তি কঠিন পরিস্থিতিতেও ধর্ম ও কর্তব্য পালন করতে পারেন সহজে হার মানেন না।ধনু, কালপুরুষের নবম ঘর ও ধর্মভাব, যা বৃহস্পতি শাসিত, এবং অগ্নিতত্ত্ব দ্বারা পরিচালিত।এই অগ্নি অজ্ঞতা দূর করে জ্ঞান ও আলোকিত বোধ আনে। ধনু একটি উভয়চর রাশি, তাই তা ইঙ্গিত করে ভারসাম্যপূর্ণতা।
ধনু ব্যক্তির চোখ সুন্দর হয়, কারণ দ্বিতীয় ঘর (মুখ ও চোখের ঘর) শুভ, এবং এর অধিপতি শুক্র ১১তম লাভ ঘরে শক্তিশালী।শুক্র ৬ষ্ঠ ও ১১তম ঘরের অধিপতি, এবং ৪র্থ ঘরে (সুখ) স্থানে উচ্চের।এর অর্থ ব্যক্তি আনন্দ, সৌন্দর্য ও আরাম পায়, এর মধ্যে একটি উপাদান হলো চোখের সৌন্দর্য।অন্যদিকে, তাদের নাক ও ঠোঁট অপরিচ্ছন্ন হয়। এর কারণ ধনু রাশির প্রতীক অর্ধেক মানুষ ও অর্ধেক ঘোড়া।ঘোড়ার চোখ সুন্দর ও প্রাণবন্ত হয়, কিন্তু নাক ও ঠোঁট সাধারণত ধুলোমলিন হয়, এই বৈশিষ্ট্য ধনু রাশির মানুষের মধ্যে দেখা যায়।
তাদের নখ কুৎসিত। শনির প্রভাব নখের ওপর পড়ে এবং তৃতীয় ঘর বাহু নির্দেশ করে এই লগ্নে কুম্ভ তৃতীয় ঘরে অবস্থান করে, যা শনির ও রাহুর অধীন, ফলে নখ কুৎসিত হয়।উপরন্তু, ধনু রাহুর নিচ রাশি এবং রাহু ও শনি এক ধরনের ফল দেয়। মেষও শনির নিচরাশি, যেটিতেও নখ কুৎসিত হয়।
ব্যক্তি খুব ন্যায়পরায়ণ ও সুবিচারপ্রবণ , কারণ ধনু একটি স্বাভাবিক ন্যায়ের রাশি। কুণ্ডলীতে নবম ঘর বিচার ও ধার্মিকতা নির্দেশ করে, আর লগ্নেশ বৃহস্পতি বিচারক।ধনু কালপুরুষের ধর্মভাব এবং বৃহস্পতির রাশি হওয়ায় এটি ন্যায়ের ঘর।
ব্যক্তির উরু মোটা এবং পেট স্ফীত — এটি বৃহস্পতির প্রভাব। বৃহস্পতি বৃহদাকার, উদরবহুল।বৃহস্পতির দুটি রাশি: ধনু (অগ্নিতত্ত্ব) ও মীন (জলতত্ত্ব)।মীন জলতত্ত্বের কারণে মোটা শরীর নির্দেশ করে, আর ধনু অগ্নিতত্ত্বের কারণে তুলনামূলকভাবে সঞ্চিত শক্তি ও মাংসপেশিতে ভরপুর শরীর, যোদ্ধার মত কাঠামো দেয়। মীন, পুরোহিত বৃহস্পতির রাশি হওয়ায়, স্থূল দেহনির্দেশ করে।
ব্যক্তি বিজ্ঞান ও শাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ কারণ ধনু কালপুরুষের নবম ঘর, উচ্চ জ্ঞানের ঘর।বৃহস্পতি শিক্ষক ও সর্বজ্ঞ, যিনি সকল শাস্ত্র শিক্ষাদান করেন।অষ্টম ঘর গুপ্তবিদ্যার ঘর, যা এমন জ্ঞানের প্রতীক যা সাধারণের বোধগম্য নয়।এটি মেটাফিজিক্স নির্দেশ করে — দৃশ্যমান ও অদৃশ্য জগতের মধ্যে গোপন সংযোগের উপলব্ধি।
জ্ঞান ও দিব্য মাতার ৪র্থ অধিপতি তাঁর শক্তি প্রকাশ করেন ৮ম ঘরে, যা গূঢ় বিদ্যার ঘর।এটি বোঝায় যে ব্যক্তি গভীর বিজ্ঞান, গূঢ়তত্ত্ব, মেটাফিজিক্স এবং গবেষণায় পারদর্শী।৮ম ঘরগবেষণার ঘরও বটে, কারণ এটি অন্ধকার ও অনিশ্চয়তার প্রতীক।গবেষণার উদ্দেশ্য অন্ধকার দূর করে আলোর আলোকে মহাবিশ্বের কার্যপ্রণালি বোঝা — যা ৮ম ঘর নির্দেশ করে।ব্যক্তির বুদ্ধি অগ্রগামী, অর্থাৎ তিনি দূরদর্শী ও ভবিষ্যতের চিন্তায় ব্যস্ত।এর কারণ হলো রাশির অধিপতি বৃহস্পতি, যিনি জ্ঞানের কার্যকর কারক। এখানেই কেতু তাঁর শক্তি প্রকাশ করেন।কেতু ব্যতিক্রমী ও আলাদা চিন্তাভাবনার প্রতীক।কেতুর লগ্নে প্রভাব মানে বাঁধাধরা শৈলীর বাইরে চিন্তা ও ভবিষ্যতের এক শক্তিশালী দৃষ্টিভঙ্গি।এ ছাড়া, লগ্নেশ বৃহস্পতি ৮ম ঘরেশক্তিশালী হলে, ব্যক্তি গোপন মহাবিশ্ব, অন্ধকার, ব্ল্যাক হোল, ডার্ক ম্যাটার ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান রাখে। তিনি অন্য জগত এবং ভবিষ্যতের ঘটনাবলির জ্ঞান রাখেন।
কিছু ধনু লগ্নের ব্যক্তি রাগী বা ক্রোধান্বিত (প্রকোপশীল) হতে পারেন, যা লগ্নেশের শক্তিরউপর নির্ভর করে।আগ্নিতত্ত্বের কারণে লগ্নে তেজস্বিতা আসে, এবং ৮ম ঘর মেজাজ বা রাগের ঘর, যেখানে লগ্নেশ শক্তি প্রকাশ করেন। সাধারণত, লগ্নেশ শক্তিশালী হলে ব্যক্তি রাগ বা অহংকারের মত দোষ দূর করতে পারে।তাই বৃহস্পতি ও চন্দ্র শক্তিশালী হলে এই রকম স্বভাব প্রকাশ পায় না।তবে আগ্নিতত্ত্বের প্রভাবে এমন ব্যক্তি তীক্ষ্ণ বাক্য প্রয়োগকারী হয় এবং নিজের মত প্রকাশে ভয় পায় না।
এই ব্যক্তি নির্ভীক, এমনকি সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধেও অবস্থান নিতে ভয় পান না এর কারণ ৩য় ঘর ও মঙ্গলের প্রভাব। ৩য় ঘরটি কুম্ভ রাশিতে পড়ে, যা শনি ও রাহুর অধীনে।কুম্ভরাশি ভূতপ্রেত, ছিন্ন আত্মা এবং এক দেহ থেকে অন্য স্তরে যাওয়া আত্মার প্রতীক। এই ঘর থেকে ব্যক্তি চরম সাহস পায় তারা নিজেদের শত্রুকে রাতের খাবারে আমন্ত্রণ জানাতে পারে, সব রসদ দিতে পারে — তবু সংঘর্ষ থেকে পিছপা হয় না।তারা খুব স্বচ্ছ এবং ভয়হীন যোদ্ধা।তাদের সাহসই তাদের অর্জন, কারণ ৩য় ঘরের অধিপতি শনি তুলা রাশিতে (১১তম ঘর, লাভের ঘরে) শক্তিশালী।
রাশির সহ-অধিপতি রাহু তার শক্তি প্রকাশ করেন। রাহু ৭ম ঘরে শক্তিশালী এটি বিরোধিতা(প্রতিদ্বন্দ্বী) ও যুদ্ধের ঘর।এই ব্যক্তি প্রবল যুদ্ধপ্রবণ হন এবং দ্বন্দ্বে প্রবেশ করতে ভালোবাসেন। তারা ধনুক টেনে তীর নিক্ষেপে সদা প্রস্তুত যোদ্ধা।তবে বৃহস্পতি শান্তি ও ন্যায়ের প্রতীক হওয়ায়, তারা যুদ্ধ শুরু করেন না, কিন্তু প্ররোচনায় পিছুও হটেন না।তাদের শত্রুদের প্রতিও ধর্ম অনুযায়ী আচরণ করেন। ব্যক্তি তাঁর বংশ বা পরিবারে প্রধান হন। 'কুল' মানে বংশধারা, যা ২য় ঘর দ্বারা বিচার হয়। সম্মান দেখা হয় ১০ম ঘর থেকে।ধনু লগ্নের জন্য ১০ম ঘরের অধিপতি বুধ, যিনি নিজ ঘরে শক্তিশালী অবস্থান করেন — এটি প্রমাণ করে ব্যক্তি প্রাকৃতিক নেতা।পাশাপাশি, যদি শনি ২য় ঘরেশক্তিশালী হয়, তবে ব্যক্তিকে জনগণের মধ্যে নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।স্ব বা উচ্চ রাশিতে শনি সাধারণত নেতৃত্ব দেয়।
ধনু ব্যক্তি অত্যন্ত বীরত্বশালী এবং শত্রুদলকে ধ্বংস করেন। শত্রুরা তাদের বুদ্ধি ও কৌশলের সামনে টিকতে পারে না।তাঁদের শক্তি হলো সুবিচার ও ন্যায়বোধ। তারা অধ্যবসায়ী এবং পুনরায় ফিরে আসে।ধর্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করেন এবং নিজের জন্য কিছু চান না।
তবে শত্রুরাও প্রবল — অনেক সময় পুরো জীবনযুদ্ধেই কেটে যায়। একের পর এক যুদ্ধ আসে এই লগ্নে ষষ্ঠ ঘরের অধিপতি শুক্র, যিনি বৃহস্পতির প্রতি নিরপেক্ষ। বৃহস্পতি শুক্রকে নিজের রাশিতে আশ্রয় দিয়ে রক্ষা করেন।বৃহস্পতি যুদ্ধেও সবচেয়ে ধর্মনিষ্ঠ — যেমন শ্রী রাম। তারা আত্ম-প্রচার নয়, ধর্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করে।
ব্যক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে খ্যাতি লাভ করেন। লগ্ন দ্বারা খ্যাতি বিচার হয়।ধনু রাশির প্রতীক — অর্ধেক ঘোড়া ও অর্ধেক মানুষ, হাতে ধনুক ও তীর।নিচের অশ্বাংশ শক্তি, দ্রুততা, আর উপরের মানবাংশ বুদ্ধি ও কৌশল নির্দেশ করে। এই রাশিতে মানবিক ও পশুবল একত্রিত হয়।
ধনু ব্যক্তি ভ্রান্তি বা মায়ার ওস্তাদ। কেতু ভ্রান্তির কারক এবং ধনু তাঁর উচ্চস্থ রাশি।বৃহস্পতি যুদ্ধকৌশলে দক্ষ।৩য় ঘর অস্ত্র ও কৌশলের ঘর এবং ধনু লগ্নে তা কুম্ভ রাশিতে পড়ে যা শনি ও রাহুর অধীনে।শনি প্রচলিত কৌশল, রাহু গুপ্ত ও প্রতারণামূলক যুদ্ধের প্রতীক।বৃহস্পতির বুদ্ধি ও মঙ্গলের বীরত্বে দেবতারা অসুরদের বিরুদ্ধে জয়ী হয়।বৃহস্পতি কৌশল দিয়েযুদ্ধ করে, শুক্র শারীরিক ক্ষমতায়, এটাই তাদের পার্থক্য।ব্যক্তি আত্মীয়দের দোষ খোঁজে। ধনু রাশির একটি নেতিবাচক দিক।বৃহস্পতি মকর (২য় ঘর) এর প্রতি অনুকূল নন এখানে তিনি দুর্বল।যদিও এটি অর্থ বা সম্পত্তিতে প্রভাব ফেলে না, কারণ বৃহস্পতি ধনের কারক। তবে পারিবারিক বিষয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।তিনি মনে করেন কেউ তাঁর মতো জ্ঞানী নয়, এবং অতিরিক্ত সমালোচনা করেন।এই মানসিকতা থেকে যদি মুক্তি পাওয়া হয়, তা পরিবার জীবনে সুখ আনবে।এটি তখনই প্রকট হয় যখন বৃহস্পতি ও ২য় ঘরের অধিপতি শনি দুর্বল হয়।
ধনু ব্যক্তি শিল্পে আগ্রহী ও দক্ষ। শিল্প প্রতিভা ৩য় ঘর থেকে বিচার হয়।এই লগ্নে ৩য় ঘরের অধিপতি শনি ১১তম লাভঘরে শক্তিশালী, যা বোঝায় তিনি শিল্প, লেখালেখি, মূর্তিকলা ইত্যাদিতে লাভবান হন। এটি তখন বেশি দেখা যায় যখন কুন্ডলীতে শনি, শুক্র ও বুধ শক্তিশালী হন। শুক্র ও বুধ প্রকৃতিগত শিল্পের কারক।এমন একজন ধনু ব্যক্তি বিশিষ্ট স্থপতি হতে পারেন।এই ব্যক্তি নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন এবং অন্যদের কাজে হস্তক্ষেপ করেন না।কারণ তিনি খুবই মনোযোগী এবং অন্যরা কী করছে তা দেখার সময় পান না।ধনু রাশির কুণ্ডলীতে ১০ম ঘরের অধিপতি (সম্মান, কর্তৃত্ব ও কর্মের অধিপতি) ১০ম ঘরেই শক্তি প্রকাশ করে — যা ব্যক্তিকে প্রচণ্ড লক্ষ্যনিষ্ঠ করে তোলে। যখন তারা নেতা হন, তখন অধীনস্থদের স্বাধীনতা দেন এবং অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করেন না।ধনু রাশির জাতক সুক্ষ প্রবন্ধক হতে পারেন না।বরং তাঁরা অধীনস্থ ও অনুসারীদের দুর্দান্ত প্রেরণা যোগান এবং ক্যারিশম্যাটিক ও প্রভাবশালী নেতা হন।
এই ব্যক্তি আত্মীয়স্বজনদের প্রতি সদয় হন অথবা যাঁরা তাঁর আশ্রয়ে থাকেন তাঁদের প্রতিসহানুভূতিশীল হন।পরিবারকে দেখা হয় ২য় ঘর থেকে, আর বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের দেখা হয় ১১তম ঘর থেকে।রুচির ৫ম অধিপতি মঙ্গল ২য় ঘরে শক্তি প্রকাশ করে, যা পরিবারের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে।২য় ঘরের অধিপতির ১১তম ঘরে উচ্চ অবস্থান বোঝায় যে, ধনু ব্যক্তি পরিবারের সদস্যদের বন্ধু হিসেবে দেখেন।লগ্নেশ বৃহস্পতি চন্দ্রের রাশিতে শক্তি প্রকাশ করেন— চন্দ্র পরিবার বিষয়ক কারণ; এটি তাঁদের পারিবারিক মনোযোগ নির্দেশ করে।
এই ব্যক্তি দীপ্তিময় — আশাবাদী ও ইতিবাচক। এর কারণ লগ্নেশ বৃহস্পতির প্রভাব। তিনি দীপ্তি, শক্তিশালী উপস্থিতি ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেন। বৃহস্পতি পবিত্রতার প্রতীক, এবং রাশির অগ্নিতত্ত্বও পবিত্রতা ও এক উজ্জ্বল উপস্থিতি দেয়, যা আত্মবিশ্বাস ছড়ায় এবং বিষণ্নতা ও হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই ব্যক্তি মুখমণ্ডল বা চোখের রোগে ভোগেন। এর কারণ বৃহস্পতির ২য় ঘরে দুর্বলতা।বৃহস্পতি চোখ ও মুখের ২য় ঘরে শক্তি প্রকাশে অক্ষম হলে, এমন রোগ হতে পারে।তবে ৮ম ঘরে লগ্নের শক্তি প্রকাশ দীর্ঘায়ুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়, ফলে দীর্ঘমেয়াদি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।জীবনের দুর্ঘটনা থেকেও রক্ষা দেয় ৮ম ঘরের ইতিবাচকতা।তবে ২য় ঘরের দুর্বলতার কারণে চোখ বা মুখের সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষত যখন শুক্র (যিনি এই অঙ্গগুলির কারক) দুর্বল বা পীড়িত হন। এই ব্যক্তি রাজকীয় অনুগ্রহের মাধ্যমে ধন উপার্জন করেন। এর কারণ রাজসিক গ্রহ সূর্য ও চন্দ্র।সূর্যের আশীর্বাদ পান কারণ তিনি ৯ম ঘরের (ভাগ্যের) অধিপতি এবং ৫ম ঘরে (আশীর্বাদও ভবিষ্যৎ উন্নতি) শক্তি প্রকাশ করেন।মাঝে মাঝে ৯ম অধিপতি সূর্য যদি ১১তম ঘরে নীচস্থান লাভ করে, তবে রাজরোষে আয় বা সম্মান হারানোর আশঙ্কা থাকে এই ঝুঁকি বাড়ে যখন সূর্য (৯ম অধিপতি) ও শুক্র (১১তম অধিপতি) উভয়ই দুর্বল ও পীড়িত হন।
ধনু ব্যক্তি সর্বদা ধর্মপথে নিয়োজিত থাকেন। কারণ ধনু রাশি কালপুরুষের ধর্মস্থান (ধর্মভাব) ৯ম ঘরের অধিপতি সূর্য এবং ধর্মের কারক সূর্য ৫ম ঘরে শক্তি প্রকাশ করেন।রুচির ও অন্তর্মনের এই ঘর ধর্মকারক সূর্যের সদগুণে প্রভাবিত হয়ে থাকে, যা বোঝায় ব্যক্তি ধর্মনিষ্ঠ।কুণ্ডলীতে সূর্য ও বৃহস্পতির সংযোগ থাকলে ব্যক্তি দানধর্ম ও সামাজিক কাজকর্মে ব্রতী হন — যেমন মন্দির নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গঠন, জনহিতকর কাজ ইত্যাদিতে। উপরিউক্ত ব্যাখ্যা ধনু লগ্নের জাতকের একটি সাধারণীকরণ করা বর্ণনা।একটি বাস্তবিক কুন্ডলীতে গ্রহাবস্থান এই ফলাফলে তারতম্য আনতে পারে।কিন্তু, আপনি যে কারুর কুন্ডলীতে এই রাশি যেই ভাবে আছে ও তাতে অবস্থিত গ্রহের বিবেচনা করে, দেখতে পারেন।যেমন এই রাশিতে চন্দ্র থাকলে, মায়ের সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন, অথবা সূর্য থাকলে বাবার সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন।এই রাশির কিছু নেতিবাচক দিকও থাকে যা এখানে উল্লেখ করা হলো না।কারণ সাধারণত বিষয়টি না বুঝে নেতিবাচক কথা শুনে মানুষ অহেতুক চিন্তিত হয়ে পড়ে।যদি আপনি নিজের কুন্ডলী বিশ্লেষণ চান তাহলে আপনি সম্পর্ক করতে পারেন।
আমরা আপনার মতামত জানতে আগ্রহী। আপনি নিজের মতামত কমেন্ট সেকশনে অবশ্যই লিখে জানান। যদি আপনি ভবিষ্যতে জ্যোতিষ সঙ্ক্রান্তের বিষয়ে আরো পড়তে চান তাহলে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন।
Comments