জ্যোতিষশাস্ত্র: দগ্ধ রাশি কি?
- anirudhbhattachary5
- Feb 10
- 4 min read

ভারতীয় বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রে, দিন তিথি, নক্ষত্র, রাশি এক একটি অধ্যায়। এই প্রত্যেকটি বিষয়কে আলাদা করে অধ্যয়ন করতে হয়। এই প্রত্যেকটি বিষয়ের ভিন্ন প্রভাব ও ভবিষ্যৎ কথনে ভিন্ন গুরুত্ব আছে। কিন্তু এই প্রত্যেকটি বিষয়ের যোগে কিছু ইতিবাচক এবং কিছু নেতিবাচক যোগ নির্মাণ হয়। কিন্তু প্রাথমিক দৃষ্টিতে যা ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক বলে প্রতীয়মান হয় তা না-ও হতে পারে।
এই রকম একটি বিষয় হলো ‘দগ্ধ’।
জন্ম লগ্নের উপর নির্ভর করে, দগ্ধ যোগ নির্মাণ করে।
দিন-নক্ষত্র, এবং দিন- তিথির যোগে দগ্ধ যোগ তৈরি হয়। জন্ম তিথি অনুযায়ী দগ্ধ রাশি নির্দিষ্ট হয়।
‘দগ্ধ’ শব্দের সাধারণ অর্থ আমরা সবাই জানি। এমন কিছু যা পুড়ে গেছে। এমন কিছু যে নিজের উপকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। নিজের গুণ ধরে রাখতে অক্ষম।
জ্যোতিষশাস্ত্রে দগ্ধ রাশি কি?
একজন জাতকের কুন্ডলীতে জন্ম তিথি অনুযায়ী কিছু রাশি দগ্ধ হয়ে যায়। এবং এই রাশি জাতকের লগ্ন কুন্ডলীতে যেই ভাব এ অবস্থিত হয়, জাতক এই জীবনে সেই ভাব সঙ্ক্রান্ত বিষয়ে নানাহ অসুবিধা উপলব্ধি করে। জাতক সেই বিষয়গুলির প্রতি উচ্চ আশা রাখে, কিন্তু তার আশা সহজে পূর্ণ হয় না। কিন্তু বর্তমানে ব্যবহারিক জীবনে আমরা দেখতে পাই যে একজন জাতক তার দগ্ধ রাশি- ভাব সঙ্ক্রান্ত বিষয়ে অত্যধিক পারঙ্গত। অভিজ্ঞ। তার কারণ যেহেতু সেই বিষয়গুলি তাকে সহজ সাফল্য দেয়নি, সে ততোধিক প্রয়ত্নশীল ছিলো। তাই সে সেই বিষয়ে ততোধিক অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা অর্জন করেছে। কিন্তু যদি তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে সে কি সেই বিষয়গুলি নিয়ে সন্তুষ্ট? বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তার উত্তর হবে, ‘না’। কারণ তার আশা পূর্ণ হয়নি।
কিন্তু, সবার ক্ষেত্রেই কি তা সমান ভাবে প্রযোজ্য? না। কারণ এর ব্যতীক্রম নিয়ম আছে। আজকে আমরা এখানে বিষয়টির প্রাথমিক পরিচয় স্তরের আলোচনা করবো।দগ্ধ রাশি, দিন, তিথি এবং নক্ষত্রের সংমিশ্রণে তৈরি হয়। এদের মধ্যে তিথি ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ʼতিথিʼ জ্যোতিষে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে, তবে অধিকাংশ বৈদিক জ্যোতিষী ভবিষ্যৎ বলার সময় এটি উপেক্ষা করে থাকেন। শুক্ল পক্ষের ১৪টি তিথি এবং কৃষ্ণ পক্ষের ১৪টি তিথি রয়েছে, মোট ২৮টি তিথি।দুটি পক্ষেই পূর্ণিমা এবং অমাবস্যা তিথি থাকে, সুতরাং মোট ৩০টি তিথি হয়।এই ৩০টি তিথি একত্রে একটি চন্দ্র মাস গঠন করে। একটি পক্ষের প্রথম তিথি হলো প্রতিপদা এবং গণনা ভিত্তিক শেষ তিথি হলো চতুর্দশী, পূর্ণিমা এবং অমাবস্যা বাদে। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্ম প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা অথবা অমাবস্যা পর্যন্ত কোনো একটি তিথিতে হয়। প্রত্যেক তিথির সঙ্গে দুটি রাশিকে দগ্ধ রাশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, এবং একটি তিথিতে চারটি রাশি দগ্ধ রাশির তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়। পূর্ণিমা এবং অমাবস্যায় কোনো রাশি দগ্ধ রাশি নয়। এই দগ্ধ রাশিগুলি বিশেষ পরিস্থিতিতে দুর্দান্ত বা সবচেয়ে খারাপ ফলাফল দিতে পারে অথবা তেমন খারাপ নাও হতে পারে।
যদি দগ্ধ রাশি ত্রিক ভাব (৬, ৮, ১২) তে থাকে, কারণ নেতিবাচক ভাব/ঘরে নেতিবাচক রাশি ভালো ফলাফল দিতে পারে, এটা সবসময় ভালো, যদি দগ্ধ রাশি কোনো শুভ ভাবের মধ্যে থাকে, তাহলে সেই ভাব/ঘরের কিছু ভালো গুণ খারাপ হতে পারে।
সূর্য এবং চাঁদ ছাড়া, প্রতিটি গ্রহের দুটি রাশির আধিপত্য থাকে, এবং তিথি অুযায়ী যেই রাশি দগ্ধ হয়, শুধুমাত্র সেটি আক্রান্ত হয়, একই গ্রহের অন্তর্গত অন্য রাশি নয়। কিন্তু গ্রহ হিসাবে দগ্ধ রাশির স্বামী, যেখানেই অবস্থান পাবে সেখানে দগ্ধ রাশির স্বামী হওয়ার বৈশিষ্ট্য আংশিক ভাবে হলেও নিজের সঙ্গে নিয়ে যাবে।
যদি কোনো শুভ গ্রহ বক্রি অবস্থায় দগ্ধ রাশিতে অবস্থান করে, তাহলে সেটি তার দশা বা অন্তর্দশায় ভালো ফলাফল দেবে। তবে, যদি এই শুভ গ্রহ মার্গী, তাহলে সেটি তার দশা বা অন্তর্দশায় খারাপ ফলাফল দেবে। এই নিয়মটি কিছুটা হলেও গোচরে দেখা যায়, যদিও গোচরের বিবেচনা নিয়মাবলী ভিন্ন।
যদি কোনো পাপ গ্রহ দগ্ধ রাশিতে থাকে, কিন্তু মার্গী, তাহলে এটি তার দশা এবং অন্তর্দশায় ভালো ফলাফল দেবে। তবে, যদি পাপ গ্রহ বক্রি হয়, তাহলে এটি তার দশা এবং অন্তর্দশায় সবচেয়ে খারাপ ফলাফল দেবে।
যেহেতু রাহু এবং কেতু ছায়া গ্রহ,তারা কেবল বক্রি চলনে চলে, তাই এই দুটি গ্রহের দগ্ধ রাশিতে অবস্থান করা তাদের দশা এবং অন্তর্দশায় সর্বদা চমৎকার ফলাফল দেয়। তবে রাহু, কেতুর তুলনায় সচরাচর ভালো ফলাফল দেবে।
যদি কোনো দগ্ধ রাশিতে দুটি গ্রহ থাকে, যার মধ্যে একটিকে পাপ গ্রহ এবং অন্যটিকে শুভ বলে মনে করা হয় এবং পাপ গ্রহ মার্গী চলনে ও শুভ গ্রহ রেট্রোগ্রেড হয়, তবে এমন পরিস্থিতিতে শুভ গ্রহের অন্তর্দশা, পাপ গ্রহের দশার সময় ভালো ফলাফল দেবে। নিয়ম অনুযায়ী যদি পাপ গ্রহ মার্গী পথে চলে এবং শুভ গ্রহ রেট্রোগ্রেড হয়, তাহলে পাপ গ্রহের দশা ভালো ফলাফল দেবে, কিন্তু শুভ গ্রহের অন্তর্দশা খারাপ ফলাফল দেবে।
সূর্য এবং চন্দ্র সবসময় মার্গী পথে চলে, এবং আলোকিত গ্রহ, এই কারণে তাদের উপর উল্লিখিত নিয়ম প্রযোজ্য নয়।
তিথি ভিত্তিক দগ্ধরাশি তালিকা
প্রথমা তিথি - তুলা এবং মকর
দ্বিতীয়া তিথি - ধনু এবং মীন
তৃতীয়া তিথি - সিংহ এবং মকর
চতুর্থী তিথি - বৃশ্চিক এবং কুম্ভ
পঞ্চমী তিথি - মিথুন এবং কন্যা
ষষ্ঠী তিথি - মেষ এবং সিংহ
সপ্তমী তিথি - কর্ক এবং ধনু
অষ্টমী তিথি - মিথুন এবং কন্যা
নবমী তিথি - সিংহ এবং বৃশ্চিক
দশমী তিথি - সিংহ এবং বৃশ্চিক
একাদশী তিথি - ধনু এবং মীন
দ্বাদশী তিথি - তুলা এবং মকর
ত্রয়োদশী তিথি - বৃশ্চিক এবং সিংহ
চতুর্দশী তিথি - মীন, মিথুন, কন্যা এবং ধনু
পূর্ণিমা তিথি - কোনো রাশি দগ্ধ নয়
অমাবস্যা তিথি - কোনো রাশি দগ্ধ নয়
দগ্ধ যোগ (দিন এবং নক্ষত্রের সংমিশ্রণ):
রবিবার এবং ভরণী
সোমবার এবং চিত্রা
মঙ্গলবার এবং উত্তরাষাঢ়া
বুধবার এবং দানিষ্ঠা
বৃহস্পতিবার এবং উত্তরফাল্গুনি
শুক্রবার এবং জ্যেষ্ঠা
শনিবার এবং রেভতী
দগ্ধ যোগ (দিন এবং তিথির সংমিশ্রণ):
সপ্তাহের দিন এবং তিথি যোগে, দগ্ধ যোগ তৈরি হয়, যা অশুভ এবং শুভ মুহূর্তের জন্য প্রয়োজনীয় নয়:
রবিবার এবং দ্বাদশী তিথি
সোমবার এবং একাদশী তিথি
মঙ্গলবার এবং পঞ্চমী তিথি
বুধবার এবং তৃতীয়া তিথি
বৃহস্পতিবার এবং ষষ্ঠী তিথি
শুক্রবার এবং অষ্টমী তিথি
শনিবার এবং নবমী তিথি
দগ্ধ রাশি ও গ্রহেরা যদি রাজ যোগের অংশীদার হয় তাহলে অনেকাংশে রাজ যোগ ফলিত হতে দেয় না। কিন্তু উপরিউক্ত নিয়ম ও ব্যতিক্রম বিবেচ্য। দগ্ধ রাশি বিভিন্ন ভাবে, কি ধরণের ফলাফল দিয়ে থাকে, তা জানতে আমাদের ব্লগের উপর নজর রাখুন এবং সাবস্ক্রাইব করুন। আগামী সময়ে আমরা দগ্ধ যোগ ও দগ্ধ রাশির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো। যদি আপনি নিজের কুন্ডলী বিবেচনা করতে আগ্রহী তাহলে আমাদের সম্পর্ক করতে পারেন
Comments