জ্যোতিষশাস্ত্র: বৃশ্চিক লগ্ন জাতকের বৈশিষ্ট্য
- anirudhbhattachary5
- Mar 31
- 8 min read

বৃশ্চিক লগ্ন
বৃশ্চিক রাশি হল রাশিচক্রের অষ্টম রাশি, যার প্রতিক একটি বিছা (বৃশ্চিক) এবং একটি গভীর কূয়ার দ্বারা প্রতীকৃত। এটি এত গভীর যে সূর্যের আলো কদাচিৎ এর তলদেশে পৌঁছায়। এটি জল তত্ত্ব রাশি এবং কীট রাশি, অর্থাৎ কীটপতঙ্গের জগত, এবং যারা গভীর ফাটল ও গহ্বরে বাস করে, যেমন সাপ ও অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণী। এটি একটি গোপনীয় রাশি এবং মঙ্গল গ্রহের স্ত্রীলিঙ্গ রাশি। এই রাশিতে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তি মাঝারি উচ্চতার, দৃঢ় শরীরের অধিকারী হন। মুখ প্রশস্ত, ছোট ও ধুসর গাঢ় চোখবিশিষ্ট হয়। এই ব্যক্তি গাঢ় ত্বকের হন, কোঁকড়ানো চুল হতে পারে ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থাকে।
মঙ্গলের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য, অন্ধকার ও গোপনীয়তা বৃশ্চিক জাতকদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। তারা গোপনস্বভাবের, শক্তিশালী, বলশালী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সাহসী এবং চূড়ান্ত পছন্দ-অপছন্দ সম্পন্ন। বৃশ্চিক একজন দক্ষ যোদ্ধা, যিনি দায়িত্ব, বিতর্ক বা সংঘর্ষ থেকে পিছপা হন না। এটি এমন একটি রাশি যা চরম কষ্ট সহ্য করতে সক্ষম এবং কঠোর তপস্যার মাধ্যমে শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে। এই রাশিতে জন্ম নেওয়া ব্যক্তির মধ্যে ধৈর্য, সহনশীলতা ও মর্যাদা পরিলক্ষিত হয়। তারা সহজেই রেগে যায়, অন্যদের সমালোচনা করে এবং প্রায়শই বিদ্রূপাত্মক হয়। তারা অন্ধকারের প্রকৃতি বোঝে, তাই তারা গুপ্তবিদ্যা, রহস্যবাদ ও অলৌকিক বিষয়ে আকৃষ্ট হয়।
এই রাশিতে জন্মগ্রহণকারীদের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হলো—
১. দৃঢ় ও প্রশস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, ব্যায়ামের মাধ্যমে নিখুঁত
২. তীক্ষ্ণ মেধাসম্পন্ন
৩. খিটখিটে স্বভাব
৪. সাহসী ও দুর্দান্ত
৫. মাতার প্রতি সংযুক্ত
৬. যুদ্ধপ্রবণ
৭. দানশীল ও ত্যাগী
৮. গম্ভীর
৯. বাদামী রঙের চোখ
১০. সুগঠিত বক্ষদেশ
১১. চ্যাপ্টা পেট
১২. নিচু নাক
১৩. সাহসী ও দুঃসাহসিক
১৪. দৃঢ়প্রতিজ্ঞ
১৫. ভয়ঙ্কর ও শক্তিশালী
১৬. বিশ্বস্ত
১৭. মজার ও রসিক
১৮. পিত্তজনিত রোগে আক্রান্ত
১৯. পরিবার দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত
২০. গুরুজন ও বন্ধুদের প্রতি বিদ্রোহী মনোভাবসম্পন্ন
২১. অন্য নারীদের আকৃষ্ট করতে ভালোবাসে
২২. আকর্ষণীয় চেহারা
২৩. রাজসেবা বা সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত
২৪. শত্রু পরিবেষ্টিত
২৫. অন্যদের জন্য অর্থ ব্যয় করে
২৬. সদগুণসম্পন্ন জীবনসঙ্গী দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত
২৭. ধর্ম ও ন্যায়পরায়ণতায় আসক্ত
২৮. সংকীর্ণমনা
বৃশ্চিক রাশির জাতক শক্তিশালী ও প্রশস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অধিকারী হন, যা ব্যায়ামের মাধ্যমে সুগঠিত হয়। এদের প্রতীকী চিহ্ন বৃশ্চিক, যা শক্তিশালী অঙ্গ ও শক্তিশালী চেঁপা থাকে।
এই ব্যক্তির বুদ্ধি তীক্ষ্ণ, যা মঙ্গলের স্ত্রীলিঙ্গ প্রকৃতির কারণে হয়, যা একজন অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও গভীর চিন্তাশক্তির অধিকারী ব্যক্তিকে নির্দেশ করে। লগ্নপতি মঙ্গল তৃতীয় স্থানে তার শক্তি প্রকাশ করে, যা ধীমন্ত যোগ সৃষ্টি করে। সন্দেহাতীতভাবে, বৃশ্চিক লগ্নের জাতকরা রাশিচক্রের মধ্যে অন্যতম তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী।
বৃশ্চিক জাতক খিটখিটে স্বভাবের হন, যা মঙ্গলের নিষ্ক্রিয় ও অনুগত দিকের কারণে হয়। মঙ্গল সাধারণত একজন যোদ্ধা ও বহির্মুখী গ্রহ, যা রণক্ষেত্রে তার গুণাবলী প্রকাশ করে। কিন্তু বৃশ্চিকে, মঙ্গলের বীরত্ব কিছুটা দমিত থাকে, কারণ সে রণক্ষেত্রে নয়, বরং একটি গুহায় বিরাজমান। তার অন্তরে একটি গোপন অগ্নিসঞ্চার থাকে, যা রাশির স্ত্রীলিঙ্গ প্রকৃতি ও জল তত্ত্বের কারণে হয়। চন্দ্র এখানে তার দুর্বলতা প্রকাশ করে, যার ফলে জাতকের মধ্যে বঞ্চনার অনুভূতি ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।
ব্যক্তি সাহসী ও দুঃসাহসিক হন, কারণ এই রাশির অধিপতি সেনাপতি মঙ্গলের উর্জা দ্বারা চালিত। এই লগ্নে মঙ্গল তার শক্তি তৃতীয় ভাবে প্রকাশ করে, যা সাহস ও উদ্যোগের ভাব।
এই লগ্নের ব্যক্তি মায়ের প্রতি আবেগপ্রবন (সাধারণত নেতিবাচক ভাবে) সংযুক্ত থাকেন। বৃশ্চিক লগ্নের জাতকরা তাদের মায়ের কারণে দুঃখ অনুভব করেন, কারণ এই লগ্ন চন্দ্রের নীচত্বের স্থান। এছাড়া, মায়ের চতুর্থ ভাবে কুম্ভ রাশি, যা চন্দ্রের প্রতি অত্যন্ত বৈরী। এটি মাতৃস্নেহ ও ভালোবাসার অভাব নির্দেশ করে। স্বাভাবিকভাবেই, তারা মাতৃস্নেহ ও ভালোবাসার জন্য আকুল থাকেন। তারা মায়ের প্রতি অত্যন্ত ভক্তিসম্পন্ন হন, কিন্তু লগ্নপতি মঙ্গল নবম ভাবে দুর্বল অবস্থানে থাকার ফলে, চন্দ্রের বিষয়ে তাদের মাতৃভাগ্য ভালো হয় না।
ব্যক্তি সবসময় লড়াই প্রবণ হন, যা বৃশ্চিকের প্রকৃতি নির্দেশ করে। যুদ্ধের দেবতা মঙ্গল এই রাশির অধিপতি। তবে, তারা প্রকাশ্যে যুদ্ধ করতে পছন্দ করেন না, বরং গোপনে লড়াই করেন, যেমন বৃশ্চিক তার লেজ দিয়ে আঘাত করে। সহ-শাসক কেতু, যা ছায়াময় ও গোপন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে, গোপন যুদ্ধ কৌশলের ইঙ্গিত দেয়। এই শক্তিশালী জিন-গত প্রভাব তাদের প্রকাশ্যে যুদ্ধ না করার লক্ষণ নির্দেশ করে। যুদ্ধক্ষেত্রের যুদ্ধ অগ্নি তত্ত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা মেষ লগ্নের জাতকদের মধ্যে দেখা যায়। লক্ষণীয়ভাবে, মেষ সূর্যের উচ্চস্থানের রাশি, এবং বৃশ্চিক চন্দ্রের নীচস্থানের রাশি। মঙ্গলের পুরুষ রাশিতে সূর্য তার শক্তি প্রকাশ করে, কিন্তু তার স্ত্রী রাশিতে চন্দ্র দুর্বল হয়ে পড়ে।(যদিও এই দুই গ্রহ তার পরম মিত্র)।
ব্যক্তি দানশীল, ত্যাগী ও আত্মোৎসর্গকারী হন। লগ্নে চন্দ্রের নীচত্বের প্রভাবে জাতকের মধ্যে গভীর বিষণ্নতা, বস্তুগত স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি কম আকর্ষণ এবং সম্পদ ত্যাগের প্রবণতা দেখা যায়। চন্দ্র জীবিকা ও পুষ্টির সূচক। জীবিকা ও প্রেম-স্নেহ প্রদানকারী গ্রহ হল শুক্র ও চন্দ্র। লগ্নে নীচত্বপ্রাপ্ত চন্দ্র নির্দেশ করে যে বৃশ্চিক লগ্নের জাতকের আরাম-আয়েশ থাকে না। উদ্বেগ ও দুঃখ শৈশব থেকেই শুরু হয়। বৃশ্চিক রাশিতে জন্মগ্রহণকারী এবং চন্দ্র-দুষ্ট জাতক মায়ের স্তন্যপান থেকেও বঞ্চিত হতে পারেন, তাহলে অন্যান্য আরামের কথা তো দূরের কথা।
বৃশ্চিক একটি গম্ভীর রাশি, তাই এই রাশিতে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিরাও গম্ভীর প্রকৃতির হন। লগ্নে নীচত্বপ্রাপ্ত চন্দ্র তাদের মধ্যে উদ্দীপনা, আনন্দ ও আশাবাদের অভাব নির্দেশ করে। বৃশ্চিক জাতক সাধারণত নেতিবাচক দিকগুলোর প্রতি বেশি মনোযোগী হন। বৃশ্চিক মুক্তির সূচক কেতু দ্বারা শাসিত, যা বস্তুগত আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি অনাসক্তির ইঙ্গিত দেয়। আনন্দ, মজা ও উচ্ছ্বাসের সূচক বুধ, যা বৃশ্চিক লগ্নে পঞ্চম ভাবে দুর্বল হয়। এছাড়া, লগ্নপতি মঙ্গল ও বুধ একে অপরের প্রতি বৈরী।
ব্যক্তির হলদে-বাদামী চোখ থাকে, কারণ দ্বিতীয় ভাব চোখের সূচক এবং এটি বৃহস্পতির অধীনে। বৃহস্পতির চুল ও চোখ সাধারণত সোনালি বা বাদামী হয়। এছাড়া, দ্বিতীয় ভাবেঅগ্নি তত্ত্ব রাশি, যা লালচে চোখ নির্দেশ করে।
ব্যক্তির প্রশস্ত বুক থাকে, যা বৃশ্চিক রাশির প্রতীক চিহ্নে দেখা যায়। প্রশস্ত বুক সাহস ও নির্ভীকতার লক্ষণ। বক্ষপিঞ্জর চতুর্থ ভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা কুম্ভ রাশিতে অবস্থান করে। কুম্ভের শাসক রাহু ও শনি। রাহু একটি বিস্তৃত গ্রহ, যা প্রশস্ত বুক নির্দেশ করে।
ব্যক্তির পাতলা পেট থাকে, যা বৃশ্চিকের প্রতীকের মাধ্যমে বোঝা যায়। বৃশ্চিকের পেট মাংসপেশি-সম্পন্নতা নির্দেশ করে। এটি একজন মঙ্গল-শাসিত ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য, যার চেহারা একজন সেনাপতি বা পেশাদার খেলোয়াড়ের মতো হয়।
ব্যক্তির নিচু নাক থাকে, যা লগ্নে নীচত্বপ্রাপ্ত চন্দ্রের প্রভাব। নাক দ্বিতীয় ভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যার সূচক বুধ। এটি বৃশ্চিক লগ্নের জন্য প্রতিকূল গ্রহ এবং দ্বিতীয় ভাব কেতুর উচ্চস্থানের রাশি, যা ছোট জিনিস নির্দেশ করে। কেতু সব কিছু ছোট করে, আর রাহু সবকিছুকে বিশাল করে তোলে। তাই কেতুর প্রভাব নাককে ছোট করে দেয়।
ব্যক্তি অত্যন্ত দুঃসাহসী হন, কারণ মঙ্গল সাহস ও দুঃসাহসের গ্রহ, যা লগ্ন শাসন করে। এছাড়া, লগ্নপতি মঙ্গল তৃতীয় ভাবে তার শক্তি প্রকাশ করে, যা সাহস, বীরত্ব ও দুঃসাহস নির্দেশ করে। ব্যক্তি প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে পছন্দ করেন এবং তার ভাগ্যের দ্বারা সমর্থিত হন, কারণ নবম ভাবের অধিপতি চন্দ্র সপ্তম ভাবে তার শক্তি প্রকাশ করে। বৃশ্চিক জাতক অসাধারণ সমাজকর্মী হতে পারেন, যারা নির্ভয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে পারেন। তারা সহজে ভয় পায় না বা পিছু হটে না।
ব্যক্তি দৃঢ়, ভয়ঙ্কর ও অপরাজেয় হন। বৃশ্চিক স্থির রাশি, যা দৃঢ়তা ও সংকল্প নির্দেশ করে। রাশির প্রতীক গভীর কূয়া, যেখানে জল স্থির থাকে। যদিও বৃশ্চিক জল তত্ত্ব রাশি, তবুও এতে জল খুবই কম থাকে, যা জাতকের আবেগীয় অভাব নির্দেশ করে। আবেগ তাদের সহজে প্রভাবিত করতে পারে না। তারা সংবেদনহীন বা কম আবেগপ্রবণ হন। কারণ আবেগের সূচক চন্দ্র লগ্নে নীচত্বপ্রাপ্ত। তারা লড়াইয়ে অত্যন্ত তীব্র, কঠোরভাবে প্রতিরোধী এবং সহজে হার মানেন না। জীবনের দুঃখ তাদের কঠোর করে তোলে, ফলে আবেগ দ্বারা প্রভাবিত হন না। তারা নিখুঁত এবং আবেগহীন হ্য়ে মৃত্যুদণ্ড-প্রদানকারী হতে পারেন, কারণ তারা অন্যের দুঃখ বা মৃত্যুতে সহজে প্রভাবিত হন না। এটি তাদের কঠোর, বিষণ্ন ও গম্ভীর ব্যক্তিত্বের কারণে।
এই ব্যক্তি বিশ্বাসযোগ্য। এই বৃশ্চিক জাতক দৃঢ়প্রকৃতির হন, তারা জাগতিক ভোগ-বিলাস ও স্বাচ্ছন্দ্যের সন্ধান করেন না, তাই তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার থাকে। বৃশ্চিক রাশি রাহুর নীচত্বস্থান, যা দ্বৈত প্রকৃতির গ্রহ, তাই তারা যা বলেন তা করে দেখান। বাক্যের (মুখের কথার) দ্বিতীয় ভাব অধিপতি, বৃহস্পতি ধর্মভাবে তার উচ্চ শক্তি প্রকাশ করে। ফলে তারা বাক্যের ধর্ম মেনে চলে এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে না। তারা অত্যন্ত বিশ্বস্ত বন্ধু, যারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে নিজের জীবনের পর্যন্ত বাজি রাখে। তারা নির্ভীক, কারণ শৈশব থেকেই তারা মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছেন।
তারা রসিক হন। কিন্তু, একজন ব্যক্তি কিভাবে একইসাথে গম্ভীর ও রসিক হতে পারেন? এর মানে হলো তারা গভীরভাবে গম্ভীর প্রকৃতির হন এবং বাহ্যিক আনন্দ বা দুঃখে সহজে প্রভাবিত হন না। তবে বন্ধুদের সাথে থাকলে মাঝে মাঝে প্রফুল্ল হয়ে ওঠেন। তারা বড় সামাজিক অনুষ্ঠান বা বিনোদন পছন্দ করেন না এবং সাধারণত নিভৃতচারী। কিন্তু যখন বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের মাঝে থাকেন, তখন ভিন্ন মেজাজে থাকেন। আনন্দ ও মজার গ্রহ বুধ একাদশ ভাবে তার শক্তি প্রকাশ করে, যা নির্দেশ করে যে বন্ধুরা ঘিরে থাকলে তারা বুধের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করেন।
ব্যক্তি পিত্ত রোগে ভোগেন, যা তাদের শরীরে অতিরিক্ত অগ্নিতত্ত্বের কারণে হয়। এই রাশির অধিপতি অগ্নিতত্ত্ব গ্রহ মঙ্গল ও বায়ুতত্ত্ব গ্রহ কেতু, যেখানে বায়ু অগ্নিকে প্রবল করে। আঘাত ও রোগের ভাব ষষ্ঠ ভাবও মঙ্গলের অধীন, এবং এটি অগ্নিতত্ত্ব রাশিতে অবস্থান করে। এছাড়া, এটি জলতত্ত্ব রাশি (থেমে থাকা/দাড়িয়ে থাকা জল) এবং এখানে চন্দ্র নীচত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় কফ জাতীয় রোগও হতে পারে।
ব্যক্তি পারিবারিক সৌভাগ্যে ধন্য হন। নবম ভাব ভাগ্যের ভাব, এবংপারিবারের নৈসর্গিক কারক চন্দ্র নবম ভাবের অধিপতি, এবং পারিবারের দ্বিতীয় ভাবের অধিপতি বৃহস্পতি নবম ভাবে তার উচ্চ শক্তি প্রকাশ করে। যদিও মাতৃস্নেহের অভাব থাকে, কারণ চন্দ্র লগ্নে নীচত্বপ্রাপ্ত, তবুও তাদের ভাগ্যে সমর্থনশীল ও সমৃদ্ধ (অথবা বৃহৎ) পরিবার থাকে, কারণ পারিবার ভাবের অধিপতি বৃহস্পতি নবম ভাবে শুভ ফল প্রদান করে।
এই বৃশ্চিক জাতক গুরু, প্রবীণ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি বিদ্রোহী হন। লগ্নপতি মঙ্গল নবম ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, যা নির্দেশ করে যে তারা নবম ভাবের বিষয়গুলোর প্রতি বৈরী মনোভাব পোষণ করেন। তদুপরি, নবম ভাবের অধিপতি চন্দ্র লগ্নে দুর্বল হওয়ায়, প্রবীণদেরও তাদের প্রতি সহানুভূতি থাকে না। ফলে তারা গুরু ও প্রবীণদের প্রতি বিদ্রোহী মনোভাব গড়ে তোলেন। তারা গুরুকে অসম্মান সবসময় করেন না, কারণ বৃহস্পতি নবম ভাবে উচ্চস্থানে থাকে, কিন্তু তারা গুরু ও প্রবীণদের আশীর্বাদের ওপর নির্ভর না করে নিজের ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস রাখেন।তাদের আমিত্ব ভাব তীব্র হয়। তারা গুরুর বিরোধিতা করতে পিছপা হন না, যদিও সেটি গুরুদের আপত্তিকর মনে হতে পারে।
ব্যক্তি অন্য নারীদের আকৃষ্ট করতে বা প্রলুব্ধ করতে পছন্দ করেন। বৃশ্চিক জাতকের মনের অবস্থা কেমন? পঞ্চম ভাব জলতত্ত্ব রাশি এবং এটি শুক্রের উচ্চস্থান। শুক্র নারী, সম্পর্ক, প্রেম এবং যৌনতার সূচক। তাদের যৌনতা গভীর হয়, কারণ লগ্নপতি মঙ্গল তৃতীয় ভাবে উচ্চস্থানে থাকে এবং শুক্র পঞ্চম ভাবে উচ্চস্থানে অবস্থান করে। সাধারণত তারা সীমিত সম্পর্ক রাখেন, কিন্তু তাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হয়। শৈশবে মাতৃস্নেহের অভাব থাকার কারণে, তারা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হতে পারেন, যা নারীসঙ্গের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষায় রূপ নেয়। তারা মাতৃস্নেহের অভাব পূরণ করতে নারীসঙ্গের দিকে ঝোঁকেন এবং কখনও কখনও তাদের সঙ্গীর প্রতি অত্যন্ত অধিকারবোধ প্রকাশ করেন।
ব্যক্তির আকর্ষণীয় চেহারা থাকে। চেহারা নির্দেশ করে দ্বিতীয় ভাব, যার অধিপতি বৃহস্পতি। বৃহস্পতির প্রভাব দ্বিতীয় ভাব তাদের মর্যাদাপূর্ণ চেহারা দেয়। এছাড়া, তাদের চেহারা তাদের ভাগ্য বৃদ্ধির কারণ, কারণ দ্বিতীয় ভাবের অধিপতি বৃহস্পতি নবম ভাবে তার উচ্চ শক্তি প্রকাশ করে।
ব্যক্তি রাজা বা সরকারি সেবায় নিযুক্ত হন। রাজা সূর্য দ্বারা নির্দেশিত এবং ক্ষমতার ভাব দশম ভাব। এই লগ্নের দশম ভাব সূর্যের শাসিত, যা লগ্নপতি মঙ্গলের সঙ্গে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। তারা রাজা বা তাদের ঊর্ধ্বতনদের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন। তারা সহজেই রাজা বা ঊর্ধ্বতনদের নজরে আসেন এবং তাদের অনুগ্রহ লাভ করেন।
বৃশ্চিক জাতক সবসময় শত্রুদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকেন, তাই তারা গোপনে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকেন। বাহ্যিকভাবে তারা শান্ত মনে হলেও, অন্তরে তারা একটি বৃশ্চিকের মতো সর্বদা প্রস্তুত। তাদের জন্য জীবন সংগ্রাম ও লড়াইয়ের পথ মুখ্য, কারণ লগ্নপতি মঙ্গল ষষ্ঠ ভাবেরও শাসক, যা শত্রুতা, আঘাত ও অপমানের ভবন। তাদের শত্রুরা ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী, কারণ সূর্য ষষ্ঠ ভাবে তার শক্তি প্রকাশ করে। এছাড়া, সুখ ও আরামের চতুর্থ ভাবের অধিপতি ষষ্ঠ ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায়, লড়াইয়ের ফলস্বরূপ তারা দুঃখ ভোগ করেন। কখনও কখনও তারা নিজেদের পরিচয়, সামাজিক কাঠামো, জন্মভূমি ও বাড়ি থেকে দূরে সরে যেতে চান, কারণ চতুর্থ ভাবের অধিপতি শনির দ্বাদশ ভাবে উচ্চস্থান প্রাপ্ত হওয়া, যা নিজের ভূমি বা পরিচয় ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশক। ষষ্ঠ ভাবের শত্রুরা দশম ভাবের সূর্যের সমর্থন পায়, যা ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নির্দেশ করে, অথচ লগ্নে কেউ সমর্থন দেয় না, কারণ চন্দ্র এখানে নীচত্বপ্রাপ্ত।
ব্যক্তি তার অর্থ অন্যদের দান করেন। কারণ দ্বাদশ ভাবের অধিপতি শুক্র, যা ব্যয় ও দানের সূচক, পঞ্চম ভাবে তার শক্তি প্রকাশ করে, যা অন্তর্মন বা বিবেকের ভাব। এর অর্থ তারা দানশীল, আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য খরচ করেন এবং নারীদের ওপর অর্থ ব্যয় করতে ভালোবাসেন। তারা নারীদের সঙ্গ পছন্দ করেন এবং তাদের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন।
এই বৃশ্চিক জাতক সাধারণত একজন ভালো স্বভাবের স্ত্রী দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হন। কারণ নারীদের সূচক শুক্র পঞ্চম ভাবে তার শক্তি প্রকাশ করে। পঞ্চম ভাব ত্রিকোণ এবং দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ নির্দেশ করে। এটি মহর্ষিদের আশীর্বাদকেও নির্দেশ করে।
ব্যক্তি ধর্ম বা ন্যায়ের প্রতি সংযুক্ত থাকেন। গুরুর সূচক বৃহস্পতি নবম ভাবে তার শক্তি প্রকাশ করে। বৃহস্পতি পঞ্চম ভাবের অধিপতি, যা অন্তর্মনের সূচক, নবম ভাবে তার শক্তি প্রকাশ করে, যা ন্যায়ের প্রতি প্রবণতা নির্দেশ করে। তারা ধার্মিক, ধর্মপ্রাণ ও ন্যায়পরায়ণ হন। তবে তারা গুরু ও প্রবীণদের প্রতি বিদ্রোহী হন, কারণ লগ্নপতি নবম ভাবে দুর্বল এবং নবম ভাবের অধিপতি লগ্নে দুর্বল। তারা গুরুকে অসম্মান করেন না, তবে তারা প্রশ্ন তুলতে ভয় পান না। তারা অন্ধভাবে কিছু মেনে নেন না এবং এমনকি রাজাকেও প্রশ্ন করতে পিছপা হন না।
বৃশ্চিক ব্যক্তি সংকীর্ণ মানসিকতার হন। মননের প্রশস্ততা নবম ভাবের শক্তি থেকে বোঝা যায়। লগ্নপতি এবং নবম ভাবের অধিপতির পারস্পরিক নীচত্ব সম্পর্ক এবং উল্টো সম্পর্ক এটিকে নির্দেশ করে। তারা তাদের নিজস্ব পথ বা বিশ্বাসের প্রতি মনোযোগী থাকেন। বৃহস্পতি এবং পঞ্চম ভাবের অধিপতি নবম ভাবে উচ্চস্থানে থাকলেও, তারা অন্যদের প্রতি কম সহনশীল হন, কারণ লগ্নপতি নবম ভাবে নীচত্বপ্রাপ্ত। মনোযোগ ও দৃঢ় সংকল্প রাশির বৃশ্চিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা নির্দেশিত হয় এবং কূপের প্রতীকে প্রতিফলিত হয়, যা স্থিরতা, দৃঢ়তা এবং সংকল্প নির্দেশ করে।
উপরিউল্লিখিত বৈশিষ্ট্য গুলি একটি লগ্নভিত্তিক ফাঁকা কুন্ডলী ( জন্ম সময়ের গ্রহাবস্থান বিহীন) বিশ্লেষণ। কিন্তু একটি কুষ্ঠিতে প্রকৃত গ্রহাবস্থান এই ফলাফলে ভিন্নতা আনে। আপনি যদি নিজের কুন্ডলী বিশ্লেষণ করতে আগ্রহী, তাহলে আপনি আমাদের সম্পর্ক করতে পারেন।
আপনার বৃশ্চিক লগ্নের বিষয়ে কি অভিজ্ঞতা, আমাদের জানাতে পারেন। এই লেখাটি পড়ে আপনার কি মতামত আমাদের অবশ্যই জানান কমেন্ট সেকশনে। পরবর্তীতে জ্যোতিষ সঙ্ক্রান্তের বিভিন্ন বিষয়ে জানতে আগ্রহী হলে সাবস্ক্রাইব করুন।
really liked it. very detailed
A must read article.