জ্যোতিষশাস্ত্র সিংহ লগ্নের জাতকের বৈশিষ্ট
- anirudhbhattachary5
- Mar 3
- 4 min read

সিংহ লগ্ন
সিংহ রাশি একটি সিংহ দ্বারা চিহ্নিত, এটি ঘন অরণ্য দ্বারাও চিহ্নিত যা অগম্য। এটি একটি রাজকীয় রাশি, যা রাজকীয় গ্রহ সূর্য দ্বারা শাসিত, গ্রহের মন্ত্রিসভার রাজা। সিংহ রাশি একটি স্থির রাশি, অগ্নিতত্ত্ব রাশি, এবং এটি অগ্নিতত্ত্ব গ্রহ দ্বারা শাসিত। এই রাশিতে জন্মগ্রহণ করেছেন এমন জাতকের, গঠন মাঝারি উচ্চতার, শক্তিশালী এবং সোজা, প্রশস্ত এবং সুগঠিত কাঁধ এবং একটি মর্যাদাপূর্ণ চেহারা থাকে। ত্বক উজ্জ্বল বাদামী বা লালচে, মুখ ডিম্বাকার, এবং ব্যক্তিকে দেখতে রাজকীয় মনে হয়।
একজন সিংহ রাশির ব্যক্তি আত্মবিশ্বাসী, মর্যাদাপূর্ণ, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, সম্মানজনক, সরল, মহানুভাবী, উদার, সিংহ হৃদয়যুক্ত। তিনি গর্বিত, অহংকারী এবং তার শক্তি ও ঐশ্বর্য প্রদর্শন করতে পছন্দ করেন। এমন ব্যক্তি সাধারণত বিশ্বস্ত এবং উষ্ণ হৃদয়যুক্ত। সাধারণত অত্যন্ত প্রফুল্লিত, সামাজিক সম্পর্ক এবং বন্ধু ও আত্মীয়দের দ্বারা ঘিরে থাকেন। তারা নিজের চারপাশে হাস্যোজ্জ্বল মুখ ও সখ্যতার পরিবেশ তৈরি করেন। এরা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেগত প্রাকৃতিক নেতা, সাহায্যকারী প্রকৃতির এবং তাদের স্বজন, পরিবার ও বন্ধুদের রক্ষা করেন। এরা তাড়াতাড়ি রেগে যান এবং একজন স্বাভাবিক যোদ্ধা হলেও মহানুভাবী ও ক্ষমাশীল প্রকৃতির। এরা আরাম, বিলাসিতা, সেবা এবং আদেশ দেওয়ার প্রকৃতি পছন্দ করেন। এরা অলস হতে পারেন, এবং নিজে কিছু না করে অন্যদের কাজ করতে আদেশ দিতে পছন্দ করেন।
সিংহ রাশির জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল
মাংসভোজী অভ্যাস,
রাজা থেকে সম্মান ও অর্থ অর্জন,
ধর্মের প্রতি অবহেলা,
পারিবারিক দায়িত্বে নিষ্ঠাবান,
সিংহের মতো মুখ,
উচ্চ পদমর্যাদা অর্জন,
মহিমান্বিত, শক্তিশালী ও সাহসী,
কম কথা বলা,
মিতব্যয়ী,
অন্যদের সমস্যা তৈরি করা,
খাওয়া পছন্দ করা এবং পার্থিব আনন্দে মগ্ন থাকা,
পাহাড় ও জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো,
রেগে যাওয়া,
বন্ধুত্বে দৃঢ়,
যত্নহীন,
এদের এ্যাপ্রোচ করা কঠিন,
শত্রু ধ্বংস কারী,
খ্যাতিসম্পন্ন সন্তান জন্মদান,
সৎ লোকদের সম্মান করা,
কৃষি ইত্যাদি থেকে ধনী হওয়া,
ব্যবসায় আগ্রহী,
পতিতা, নর্তকী এবং স্ত্রীর উপর প্রচুর খরচ করা,
দাঁতের রোগে আক্রান্ত হওয়া।
সিংহ লগ্নে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তি মাংস খেতে পছন্দ করেন, অর্থাৎ, মাংসের প্রতি আগ্রহী যা সিংহ রাশির প্রতীকী মাংসভোজন নির্দেশ করে। সিংহ হল একটি মাংসভোজী প্রাণী, তাই এই রাশির সঙ্গে মাংস খাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কুণ্ডলীতে দ্বিতীয় ভাবে সিংহ রাশি অথবা দ্বিতীয় ভাবের স্বামী সিংহ রাশিতে থাকে, তবে ব্যক্তি মাংস খাওয়ার প্রতি আগ্রহী হতে পারেন।
এমন ব্যক্তি রাজার কাছ থেকে সম্মান ও অর্থ অর্জন করে, অর্থাৎ, রাজার কাছ থেকে মান ও ধন লাভ করে, কারণ সূর্যের শক্তিশালী প্রভাব লগ্নে এবং ভাগ্যের নবম ভাবে। সূর্য হল রাজা এবং লগ্নের অধিকারী। রাজা থেকে লাভ সূর্যের প্রভাব দ্বারা প্রতিফলিত হয়। দশম ভাব হল রাজা এবং সম্মানের ভাব, যা সিংহ রাশির জন্য একটি অনুকূল স্থান।
সিংহ রাশির জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তি তার ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্মে চলে যেতে পারে, কারণ নবম ভাব ধর্ম ও ধর্মীয় প্রভাব দুর্বল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মঙ্গল, একটি ক্রুড় গ্রহ, নবম ভাবের অধিকারী। সূর্য তার শক্তি নবম ঘরে নৈসর্গিক ভাবে প্রকাশ করে, এবং ব্যক্তি নিজেকে ঈশ্বরের অবতার(রুপক অর্থে) মনে করে এবং অন্যরা তাকে পূজা করুক এমন চায়। সহজ অর্থে রাজা নিজের অনুগত প্রজা চায়। যদিও এটি প্রাচীন সময়ে সত্য ছিল, কারণ রাজারা নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি মনে করতেন, যাদের পৃথিবীতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পাঠানো হয়েছে।
এমন ব্যক্তি পারিবারিক দায়িত্বে নিষ্ঠাবান, অর্থাৎ, পরিবারের কাজকর্মে সক্রিয়, কারণ দ্বিতীয় ঘর এবং সূর্য, যা ধর্মের জন্য করক। দ্বিতীয় ঘর পরিবার এবং সূর্য হল একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীলতার প্রতিনিধিত্বকারী। এমন জাতক সাধারণত পারম্পরিক ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিমুখ, তবে তারা পরিবারের প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান এবং দায়িত্বশীল, কারণ দ্বিতীয় ঘরের গ্রহ এবং সূর্য একে অপরের প্রতি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে।
ব্যক্তির মুখ সিংহের মতো, অর্থাৎ, মুখ এবং কাঁধ প্রশস্ত, চোখ ক্ষিপ্র। এটি সিংহ রাশির প্রতীক অনুসারে, যেহেতু রাশির শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলি রাশির চিহ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত। সূর্যের প্রভাবও এখানে দৃশ্যমান, যার ফলে ব্যক্তি গম্ভীর, আদেশকারী এবং কখনও কখনও রেগে যান। এমন ব্যক্তিরা সহজেই approachable নন, কারণ তিনি অন্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পছন্দ করেন।
এমন ব্যক্তি উচ্চ পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত, অর্থাৎ, সম্মান এবং কর্তৃত্বের স্থানে থাকেন অথবা নিজেকে অধিষ্ঠিত করে রাখেন। সিংহ রাশি একটি রাজকীয় রাশি এবং রাজাদের বাসস্থান। এটি একটি দুর্গ দ্বারা রক্ষিত তার স্বরুপ এবং সেখানে প্রবেশ করা কঠিন। সূর্য স্বাভাবিকভাবে একজন নেতা, রাজা এবং একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন। সূর্য তার শক্তি নবম ভাবে প্রকাশ করে, যা দৈব আশীর্বাদ এবং আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শকের ভাব। অন্যরা তাকে ঈশ্বর কর্তৃক নিয়োগকৃত একজন শাসক মনে করে।
সিংহ রাশির ব্যক্তি মহিমান্বিত এবং শক্তিশালী, অর্থাৎ, গম্ভীর এবং শক্তির সঙ্গে মিলিত। সূর্যের প্রভাবের কারণে, একজন সিংহ ব্যক্তি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এবং গম্ভীর হন। সূর্য কখনও তুচ্ছ বিষয়ে জড়িত হয় না। তাদের মধ্যে এমন একটি গুরুতরতা থাকে যা রাজা বা শাসকের মতো। তারা সাধারণত সম্মানিত হন।
ব্যক্তি সাহসী, একাগ্র এবং দুঃসাহসী, অর্থাৎ, সাহসী সূর্যের প্রভাবের কারণে। সাহসীতা আসে সূর্যের শক্তি থেকে, তবে সূর্যের দুর্বল প্রভাব তৃতীয় ঘরে নিজের প্রচেষ্টা দ্বারা দুঃখজনক ফলাফল সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে, সূর্য নবম ঘরে শক্তিশালী হলে, তারা আধ্যাত্মিক আশীর্বাদের উপর নির্ভর করতে পছন্দ করে।
ব্যক্তি কম কথা বলে, অর্থাৎ, সংক্ষিপ্ত বাক্য ব্যবহার করেন, সূর্যের প্রভাবের কারণে। সূর্য সাধারণত কম কথা বলেন এবং শুধুমাত্র যখন প্রয়োজন হয় তখনই কথা বলেন। এটি চন্দ্র, শুক্র এবং বুধের থেকে ভিন্ন, যারা কথা বলার প্রবণতা দেখায়।
ব্যক্তি মিতব্যয়ী, অর্থাৎ, অর্থ ব্যয় বা দানের ক্ষেত্রে সংকীর্ণ মানসিকতা হতে পারে, যদি না তা তাকে উচ্চতর দেখায়, কারণ তৃতীয় ঘরে শুভ গ্রহের প্রভাব। তৃতীয় ঘর শুক্র দ্বারা শাসিত, এটি ব্যক্তির মিতব্যয়ী প্রকৃতির পরিচায়ক।
সিংহ রাশির জাতক শত্রু নাশ করেন কারণ সূর্য ষষ্ঠম ভাবের স্বামীর চেয়ে বেশি শক্তিশালী। উপরন্তু ষষ্ঠম ভাবের নৈসর্গিক কারক মঙ্গল এই জাতকের ভাগ্য ঘরের স্বামী ও লগ্নপতির বন্ধু। জাতকের তৃতীয় ভাবের স্বামী তাঁর অষ্টম ভাবে নিজের শক্তি ক্রিয়ান্বিত করেন। তাই জাতক ঝুঁকি নিতে পিছপা হয় না। আবার ষষ্ঠম ঘরের স্বামী তৃতীয় ঘরে নিজের শক্তি ক্রিয়ান্বিত করেন। তাই জাতক সাহসী।
যদি জাতক ধর্মের পথে থাকে তাহলে তার শক্তি বৃদ্ধি হয়। তা না হলে অধর্মের পথে গেলে তার দুর্বলতা বৃদ্ধি পায়।
এই জাতক ব্যবসা ও তার দ্বারা ধন উার্জনে আগ্রহী হয়ে থাকে। এই জাতক মহিলাদের উপর ব্যায় করে। নিজের পরিবার, স্ত্রীর উপরে করেই থাকে, কিন্তু এরা বেশ্যাদের উপরেও ব্যায় করে থাকে, ( যদিও এখন সেই যুগ বদল হয়ে গেছে, কিন্তু তারতম্যের পরেও তা এখনও প্রত্যক্ষ করতে পারবেন)। বৃহস্পতি দ্বাদশে নিজের শক্তি উদ্ভাসিত করেন এবং ষষ্ঠম ভাবে দুর্বল। তাই জাতকের বদভ্যাস থাকে।
এই জাতকের সন্তান খুব ভালো হয়ে থাকে, পঞ্চমে ভাবের স্বামী তার মিত্র হওয়ায় এবং পঞ্চম থেকে পঞ্চমে লগ্নেশ নিজের শক্তি উদ্ভাসিত করেন। সিংহ রাশির জাতক দাঁত সঙ্ক্রান্তে বিভিন্ন অসুবিধা ভোগ করে থাকেন। রাহু ও বৃহস্পতির কারণে। রাহু সূর্য ও বৃহস্পতি কুন্ডলীতে দুর্বল হলে এই সমস্যা বেশী হয়।
উপরিউক্ত বিশ্লেষণ প্রাথমিক ধাপের একটি ফাঁকা কুন্ডলী ছকের বিশ্লেষণ। আধ্যাত্মিক বিশ্লেষণ করতে হলে এর আরো গভীর স্তর আছে। কুন্ডলীর বিভিন্ন ভাবে গ্রহদের প্রকৃত অবস্থান এই উল্লিখিত ফলাফলে ভিন্নতা আনবে। যদি আপনি নিজের কুন্ডলী বিশ্লেষণ করতে আগ্রহী, তাহলে আমাদের সম্পর্ক করতে পারেন।
আপনি নিজের মতামত কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন। ভবিষ্যতে আরো বিভিন্ন জ্যোতিষীয় বিষয়ে জানতে আগ্রহী হলে সাবস্ক্রাইব করুন।
good